বাবরি মসজিদে আঘাতকারী বলবীর সিং এর ইসলাম গ্রহণের কাহিনী। (পর্ব-৩)
তিনি সোনিপথে যান। গিয়ে জানতে পারেন, মাওলানা সাহিত্য মাসের পহেলা তারিখে আসেন। গত জানুয়ারির ১ তারিখে এসে দুই তারিখে চলে গেছেন। চৌধুরী সাহেব খুব হতাশ হন এবং ঝাড়ফুক করনেওয়ালা কাউকে পাওয়া যায় কিনা খোঁজ করেন। জানা গেল মাদ্রাসার জিম্মাদার কারী সাহেব ঝাড়ফুঁক করে থাকেন, কিন্তু তিনিও মাওলানা সাহেবের সঙ্গে সফরে বেরিয়ে গেছেন। এরপর ঈদগাহের জনৈক দোকানদার তাকে মাওলানা সাহেবের দিল্লির ঠিকানা দিয়ে দেন এবং জানান যে আগামী পরশু বুধবার হযরত মাওলানা এখানে আসার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি তখন তার ছেলেকে শেকলে বেঁধে (বুওয়ানা, দিল্লী) ইমাম সাহেবের কাছে নিয়ে যান।
বুওয়ানার ইমাম সাহেব তাকে বলেন যে, অবস্থা খারাপ হবার দরুন ৬ ডিসেম্বর এর আগে হরিয়ানার বহু ইমাম ও মুদাররিস এখান থেকে ইউপিতে নিজেদের বাড়িঘরে চলে গিয়েছিলেন এবং তাদের মধ্যে কেউ কেউ এক মাস পর্যন্ত ফিরে আসেননি। এজন্য মাওলানা সাহেব এক তারিখে এ বিষয়ে বক্তৃতা করেন এবং বক্তৃতায় বিরাট জোর দিয়ে এ কথা বলেন যে, মুসলমানরা এসব অমুসলিম ভাইকে যদি ইসলামের দাওয়াত দিতেন এবং ইসলাম, আল্লাহ ও মসজিদের পরিচয় তুলে ধরতেন তাহলে এ ধরনের দুর্ঘটনার জন্ম হতো না।
তিনি বলেন যে বাবরি মসজিদের শাহাদাতের জিম্মাদার একদিক দিয়ে আমরা মুসলমানরাও। আর এখন যদি আমাদের হুশ হয় এবং আমরা যদি দাওয়াতের হক আদায় করতে থাকি তাহলে এই মসজিদ যারা ভেঙেছে, এই মসজিদ যারা ধরিয়েছে তারা মসজিদ নির্মাতা হতে পারে। হতে পারে তারাই মসজিদ আবাদকারী। ঠিক এ ধরনের প্রেক্ষাপটে আমাদের রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেন, হে আল্লাহ! তুমি আমার জাতিকে হেদায়েত দান কর, সুপথ প্রদর্শন করো। কেননা তারা তো জানেনা।
যোগিন্দরের পিতা চৌধুরী রঘুবীর সিং যখন বুওয়ানার ইমাম সাহেবের কাছে গিয়ে পৌঁছলেন সে সময় তার পীর সাহেবের বক্তৃতার খুবই প্রভাব ছিল। তিনি চৌধুরী সাহেবকে বলেন, আমি ঝাড়ফুঁক করতাম। কিন্তু আমাদের হযরত আমাকে এ কাজ করা থেকে থামিয়ে দিয়েছেন। কেননা এ কাজে অনেক সময় মিথ্যা বলতে এবং মহিলাদের সঙ্গে মেলামেশা করতে হয়। আর আপনার ছেলের উপর তো কোন জাদু কিংবা জিন ভুতের আছর নেই বরং এতো সেই মালিকের আজাবের ফল।
আপনার জন্য একটি সুযোগ আছে। আমাদের বড় হযরত আগামী পরশু বুধবার দুপুরে এখানে আসছেন। আপনি তখন তার সঙ্গে দেখা করুন এবং আপনার কথা তাকে বলুন। আপনার ছেলে আশা করি ভালো হয়ে যাবে। কিন্তু আপনাকে একটি কাজ করতে হবে আর তা হলো, আপনার ছেলে যদি ভাল হয়ে যায় তবে আপনাকে মুসলমান হতে হবে। চৌধুরী সাহেব বললেন, আমার ছেলে ভালো হয়ে গেলে আমি সবকিছু করার জন্য তৈরি আছি।
তৃতীয় দিন ছিল বুধবার। চৌধুরী রঘুবীর সিং যোগিন্দর কে নিয়ে সকাল আটটায় বুওয়ানা পৌঁছেন। দুপুর বেলা যোহরের আগেই মাওলানা সাহেবের আগমন ঘটে। সে কলে ভাজা যোগিন্দর সম্পূর্ণ দিগম্বর অবস্থায় দাঁড়ানো। চৌধুরী সাহেব কাঁপতে কাঁপতে মাওলানা সাহেবের পায়ের উপর পড়ে যান এবং বলতে থাকেন, মাওলানা সাহেব আমি এই আহাম্মক টাকে খুবই ঠেকাতে চেষ্টা করেছি, কিন্তু সে পানিপথের এক কুচক্রীর চক্রান্তে পড়ে।। মাওলানা সাহেব আমার ওপর দয়া করুন। আমাকে মার্জনা করে দিন। আমার ঘর বাঁচান। মাওলানা সাহেব কঠোর ভাষায় তাকে মাথা তুলতে বলেন এবং পুরো ঘটনা শুনেন।
তিনি চৌধুরীকে বলেন যে, সমগ্র জগত সংসার নিয়ন্ত্রণকারী সর্বশক্তিমান আল্লাহর ঘর মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়ে তারা এত বড় পাপ করেছে এবং এত বড় জুলুম করেছে যে, যদি তিনি গোটা বিশ্ব চরাচর ধ্বংস করে দেন তাহলে তা যথার্থ হবে। এত বরং কমই হয়েছে যে, এই পাপের বোঝা কেবল একাকী তার উপর পড়েছে। আমরাও সেই সর্বশক্তিমান মালিকেরই বান্দা এবং একদিক থেকে এই বিরাট পাপের অংশীদার আমরাও। আর তা এই দিক দিয়ে যে, আমরা তাদেরকে বোঝাবার হক আদায় করিনি যারা বাবরি মসজিদ শহীদ করেছে। এখন আমাদের আয়ত্তে আর কিছু নেই। আমরা কেবল এত টুকু করতে পারি যে আপনি সেই মালিকের সামনে কাঁদেন এবং তার কাছে ক্ষমা চান। আর আমরাও ক্ষমা চাই।
এরপর মাওলানা সাহেব বলেন যে, যতক্ষণ না আমরা মসজিদের প্রোগ্রাম থেকে মুক্ত হই আপনি গভীর ধ্যানের সাথে ও মনোযোগ সহকারে মালিকের কাছে সত্যিকারের অন্তর দিয়ে মাফ চান এবং প্রার্থনা করতে থাকুন যে মালিক! আমার বিপদ কেবল আপনি দূর করতে পারেন, আর কেউ দূর করতে পারে না।