আমাদের ভাই মোহাম্মদ আবদুল্লাহ সাঈদ (জুয়েল শীল)-এর স্বলিখিত আত্মজীবনী (পর্ব-১)

আমাদের ভাই মোহাম্মদ আবদুল্লাহ সাঈদ (জুয়েল শীল)-এর স্বলিখিত আত্মজীবনী (পর্ব-১)

(১১ জানুয়ারি,২০২৩ইং-এ তেজগাঁও এলাকায় ট্রেন দূর্ঘটনায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে)

——————————————————————–

আমার নাম ছিল জুয়েল শীল। জন্ম ২০০২ সালে চট্টগ্রামের অন্যতম পর্যটন নগরীতে এক হিন্দু পরিবারে। আমার পিতার নাম নিতাই কুমার শীল ( ছদ্মনাম)। তিনি পেশায় একজন ব্যবসায়ী। আমরা দুই ভাই ও তিন বোন আমি প্রাথমিক শিক্ষা ও সপ্তম শ্রেণী পর্যন্ত আমার গ্রামেই পড়াশোনা করি, অষ্টম শ্রেণীতে ভর্তি হই উপজেলার স্বনামধন্য এক স্কুলে আর সেখানেই পড়াকালে আল্লাহতাআলা আমাকে হেদায়েত দান করেছেন। আমি নবম শ্রেণীতে থাকাকালে ইসলাম গ্রহণ করি। ২০২০ সালে আমি বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছি ।

আমি ছোট কালে ছিলাম একটু উগ্র স্বভাবের। মানুষের সাথে মিশতে পারতাম না কিন্তু আমি সত্য কথা বলা পছন্দ করতাম। মিথ্যাবাদী অন্যায়কারীদের আমি মোটেও পছন্দ করতাম না। পরিবারের সবার ছোট ছিলাম, তাই সবাই আমাকে খুব ভালোবাসতো। মানুষকে হিংসা করা পছন্দ করতাম না। এই শিক্ষাগুলো আমি পরিবার থেকে পেয়েছি কিন্তু শিক্ষা পাইনি আমার সৃষ্টিকর্তা,নবীজি ও ইসলাম সম্পর্কে। শুধুমাত্র জেনেছিলাম কিভাবে মূর্তি পূজা করতে হয়।

আমি খুবই ধার্মিক ছিলাম। সকালে গীতা পাঠ করতাম। হিন্দু ধর্মের প্রধান ধর্মগ্রন্থ বেদ আমি কোনদিন চোখেই দেখিনি ।আমি এত ধর্ম পালন করা সত্ত্বেও আমার অন্তরে কোন ধরনের শান্তি ছিল না । দেখতাম পূজার মধ্যে ছেলে মেয়ে একসাথে নাচানাচি করছে। কি বেহায়াপনা! কি অশ্লীলতা! এটাকি ধর্ম হতে পারে? এসব প্রশ্ন মাথায় আসতো। তাই সপ্তম শ্রেণীতে ধর্ম পালন করা ছেড়েই দিয়েছিলাম।

আমি ছোটকাল থেকে আল্লাহকে বিশ্বাস করতাম কিন্তু বাড়িতে আসলে মা বাবা আমাকে জোর করে মন্দিরে নিয়ে যেত। তাতে আমার মোটেও মন চাইতো না। মন্দিরে মহিলা পুরুষ একসাথে বসে প্রার্থনা করে তাই এগুলো আমি পছন্দ করতাম না। তখন পুনঃজন্ম সম্পর্কে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিলাম। (হিন্দুধর্ম মতে জন্মান্তরবাদ হচ্ছে—আত্মার জন্ম নেই, মৃত্যু নেই, আত্মা অমর। মানবদেহের জন্ম হয় এবং মৃত্যু হয়। মৃত্যু আত্মাকে স্পর্শ করতে পারে না। মৃত্যুতে স্থূল দেহের বিনাশ হয় মাত্র। বস্ত্র জীর্ণ হলে তা পরিত্যাগ করে যেমন নূতন বস্ত্র পরিধান করে তেমনি আত্মা জীর্ণ দেহ ত্যাগ করে নূতন দেহ গ্রহণ করে। জন্মান্তরবাদ বলে যে আত্মা বার বার ফিরে আসে নতুন শরীরে তার নিজের কর্মের ঋণ চোকাতে বা শোধ করতে।

ভালো কাজ করলে মানুষ রুপে খারাপ কাজ করলে বিভিন্ন জীবজন্তু কীটপতঙ্গ ও গাছপালা ইত্যাদি হয়ে জন্ম গ্রহন করে।অনেকটা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পোষাক পরিবর্তন করার মতো। পদ্মপুরাণ এ বলা আছে কেহ মদ্যপান করলে সে পরের জন্মে শূকর হয়ে জন্মাবে পরের জন্মে, এছাড়াও আরো বিভিন্ন শাস্তির কথা বলা আছে) হিন্দু ধর্ম অনুসারে এখন কলিযুগ (হিন্দু ধর্ম অনুসারে যুগ চারটি যথা সত্য, ত্রেতা, দ্বাপর ও কলি। সত্য যুগে কোন পাপ ছিল না, ত্রেতায় তিন ভাগ পুন্য এক ভাগ পাপ, দ্বাপরে পুন্য অর্ধেক পাপ সেটাও অর্ধেক আর কলি যুগে পুন্য এক ভাগ পাপ তিন ভাগ)। এই যুগের মানুষ তো বেশিরভাগই পাপ কাজ করে। সে অনুসারে পৃথিবীতে গাছপালা জীবজন্তু ইত্যাদি বৃদ্ধি পাবার কথা ছিল কিন্তু তার উল্টোটাই ঘটছে। মানুষ বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং গাছপালা কমছে তাহলে পুনর্জন্ম কী মিথ্যা?

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *