গল্পটি আপনাকে কাঁদাবেই পর্ব-৪

গল্পটি আপনাকে কাঁদাবেই পর্ব-৪

আলহামদুলিল্লাহ। এখন থেকে আমার পরিচয় আমি একজন মুসলিম। মহাপরাক্রমশালী সেই স্বত্বার বান্দা, দাস, গোলাম এবং সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষটির (স.) উম্মতের একজন। সুবহানআল্লাহি ওয়া বিহামদিহি।

আমার প্রথম নামাজ আমি শুরু করি জুমার নামাজ দিয়ে। ফ্রেন্ডের বাসায় গিয়ে ফ্রেন্ডের সাথে নামাজে যাই। আমি তখন কিছুই জানি না। নামাজের পূর্বশর্ত অজু। নামাজ আদায়ের বিধিবিধান জানি না। পারি না অজু করতে। ফ্রেন্ড অজু করা শিখিয়ে দিল। তারপর গেলাম মসজিদে।

অনেকে আমাকে দেখে চিন্তা করে কিরে ও এইখানে কি করে! নামাজে দাঁড়িয়ে প্রথমেই ভুল করলাম। বাম হাত ডান হাত এর উপর দিয়ে হাত বেঁধে ফেলি, পাশে থাকা এক ফ্রেন্ড হাত ঠিক করে দিয়েছিলো। সবাই সিজদায় গেলে আমিও গেলাম সবাইকে দেখে দেখে। আর সিজদায় গিয়ে এমন মনে হলো যেনো আমার অন্তর থেকে অনেক বড়সড়ো একটি পাথর সরে গেলো।

এই প্রথম কুরআন তিলাওয়াত শুনছি ইমামের মুখে। নামাজে দাঁড়ানোর পর এমন মনে হলো যেনো অন্য এক জগতে প্রবেশ করলাম। নামাজ শেষে মনে এত পরিমাণ প্রশান্তি আর সুখ অনুভব করছিলাম যা বলার বাহিরে। এতোদিন এই প্রশান্তির খোঁজেই তো আমি ছিলাম!

দুনিয়ার কোনো কিছুর মূল্যে এই প্রশান্তি আমি হারাতে চাই না। এই প্রশান্তির জন্য জীবনের সবকিছু উজাড় করে দিলেও তা পাওয়া অসম্ভব। নামাজ শেষে আমার অনেক প্রফুল্ল লাগছিলো। এরপর থেকে যতটুকু সম্ভব নামাজে যাওয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু ভয় লাগতো কেউ আবার চিনে না ফেলে, জেনে না যায়।

নামাজ কিভাবে পড়তে হয় তা আমি সঠিকভাবে জানতাম না। ফ্রেন্ডের কাছে যতটুকু সম্ভব শিখেছিলাম। অন্যান্য ওয়াক্তের নামাজ পড়তে পারলেও, মিস হতো ফজরের নামাজ। আমার ফজরের নামাজ পড়ার অনেক ইচ্ছে হতো মাঝে মাঝেই।

একদিন বাসায় না গিয়ে ফ্রেন্ডের বাসায় থেকে যাই। ফজর নামাজ পরার একটা সুযোগের আশায়। বাসায় তো একদম নামাজ পড়া যাবে না। কারণ কখন আম্মু চলে আসে এই একটা ভয় আর বাসায় অনেক ছবি-মূর্তি ছিল। সেদিনই প্রথম ফজরের নামাজ পড়েছিলাম। ফজরের নামাজে অন্যরকমের এক প্রশান্তি রয়েছে।

এভাবে এক মাস গেলো। দেখতে দেখতে আমার আচার আচরণ, বেশভূষাতে বিভিন্ন পরিবর্তন আসতে থাকে। যেমন- টাখনুর উপর প্যান্ট পড়া, হালকা পাতলা দাড়ি রাখা। এগুলো দেখে আমার আব্বু-আম্মু কিছুটা সন্দেহ করলেও, কিছুই বলতো না। মাঝে মধ্যে মজার ছলে বলতো কিরে হুজুর হবি নাকি?

আব্বু-আম্মুর থেকেও বেশি সন্দেহ করা শুরু করে আমার এলাকার হিন্দু ফ্রেন্ড’রা। হঠাৎ করে একদিন এক হিন্দু ফ্রেন্ড ফোন করে আমাকে ডাকে। আমার অবাক লাগে, যে জীবনে ফোন তো দূরের কথা, কখনো মেসেজও দেয় নাই সে-ই আজকে আমাকে ফোন করে ডাকছে!

গেলাম, গিয়ে আমাকে দেখে তাদের যেনো পরান বাহির হয়ে যাচ্ছে। যারা মন্দিরের ধারে কাছেও যায় না, তারা আমাকে বলে চল মন্দিরে যাবো। আমার জন্য আজকে এত মহব্বত! তারপর তারা সেখান থেকে আমাকে নিয়ে গেলো আমাদের পাশের বিল্ডিংয়ের এক ইসকন সাধুর কাছে। ইসকনের ওই ভক্ত অনেক জ্ঞান দেয় আমাদের। আমি শুনে মনে করছি সবাইকেই জ্ঞান দিচ্ছে। হঠাৎ করে ধর্মপরিবর্তন নিয়ে জ্ঞান দেওয়া শুরু করে–

স্বধর্মে নিধনং শ্রেয়ঃ,পরধর্মো ভয়াবহঃ

এবার আমার একটু খটকা লাগে! কিরে? এগুলা নিয়ে কথা কেনো বলে? এরা কি তাহলে সব জানে? এরপর সেই ইসকনের সাধু আমার দিকে আসলো। আমাকে প্রভু অমিত বলে ডাকে। ধর্ম পরিবর্তন নিয়ে এমন এমন যুক্তি দেওয়া শুরু করলো আমি মনে মনে হাসছিলাম।

কিছু বললে তাদের সন্দেহ আরো বেড়ে যাবে ভেবে চুপ করে শুনছিলাম। তাদের দেওয়া যুক্তির মধ্যে একটা এমন যে, ‘আমরা যখন অশ্লীল ছবি দেখি তখন আমাদের অনেক ভালো লাগে। কিন্তু সেই ভালো লাগাটা ততক্ষন, যতক্ষন না আমাদের মাসটারবেশন হচ্ছে।’ ঠিক তেমনি আপনার ইসলামে গিয়ে প্রথম প্রথম অনেক ভালো লাগবে। কিন্তু পরে গিয়ে আপনি বুঝতে পারবেন আপনি কত বড় ভুল করেছেন।

যাইহোক, তাদের সন্দেহ কিছুটা হলেও দুর করে ওখান থেকে চলে আসি। এদিকে বাসায় আব্বু আম্মুর সন্দেহ হঠাৎ করে বেড়ে গেল। একদিন আম্মু হঠাৎ করে বলে উঠে ‘তুই কি অন্য জাতিতে যেতে চাস? যদি তাই হয় তাহলে আমি নিজ ইচ্ছায় তোকে তুলে দিব’।

আমি আম্মুর সাথে মজা করে বিষয়গুলোকে এড়িয়ে চলি। উনারা আমার ফ্রেন্ডদের ফোন দিয়ে বিভিন্ন কিছু জিজ্ঞেস করে আর আমাকে এসব না জানাতে বলে। অথচ আমি পাশে বসে সব শুনছি। মাঝে মাঝে দেখি বাসার বাইরে যাওয়ার সময় আমার ছোট ভাই, আব্বুকে ফোন দিয়ে বলে আমি বাইরে যাচ্ছি। এদিকে কেউ একজন আমার আম্মুকে ফোন দিয়ে বলেছে, আমাকে সে মসজিদ থেকে বের হতে দেখেছে।

ফ্যামিলির সবাই আমার উপর কড়া নজর রাখা শুরু করে। যেখানেই যাই সেখানে তারা আমার খেয়াল রাখে। নজরে নজরে রাখে। বিষয়টা এমন যেনো আমি কোন একজন আসামি। এই ব্যাপারগুলো নিয়ে আমি বিরক্ত হতাম ঠিকই কিন্তু কোন ভাবেই আমি স্বীকার করতাম না যে আমি ইসলাম গ্রহণ করেছি।

আমি প্রতিদিন একদম সকালে বের হতাম, এরপর নামাজ শেষ করে রাত করে বাসায় ফিরতাম। মাঝে মাঝে বাসা থেকে রাগ করে বেড়িয়ে ফ্রেন্ড এর বাসায় চলে যেতাম। কোথায় যাচ্ছি? কেমনে যাচ্ছি? প্রত্যেক সেকেন্ডের খবর রাখছে সবাই। এলাকার হিন্দু ফ্রেন্ডরা সবাই আব্বু-আম্মুর সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখে।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *