মোহাম্মদ আবদুল্লাহ সাঈদ

আমাদের ভাই মোহাম্মদ আবদুল্লাহ সাঈদ (জুয়েল শীল)-এর স্বলিখিত আত্মজীবনী (পর্ব-৪)

আমাদের ভাই মোহাম্মদ আবদুল্লাহ সাঈদ (জুয়েল শীল)-এর স্বলিখিত আত্মজীবনী (পর্ব-৪)

(১১ জানুয়ারি,২০২৩ইং-এ তেজগাঁও এলাকায় ট্রেন দূর্ঘটনায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে)

=================================

আসছে দুর্গাপূজা। আমার প্রথমার দিন সিরিতে হোঁচট খেয়ে পায়ের তলায় কেটে গিয়েছিল। কেন জানি কাঁটাটা শুকাচ্ছিলনা। মা ফোন করে আমাকে দুর্গাপূজায় যাওয়ার জন্য বলে। আমি বললাম ঠিক আছে যাবো। আমি সপ্তমীর দিন আমার এক মুসলিম বন্ধুকে নিয়ে সকালে বের হয়েছিলাম। যোহরের সময় মসজিদের নামাজ পড়ে চলে এসেছিলাম। তারপর আমি কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে ছিলাম। ৩-৪ টার দিকে আমার মা হোস্টেলে চলে আসে। বলছে যেভাবে হোক তোর দুর্গাপূজায় যাইতেই হবে।

আমার মাথায় একটি বুদ্ধি এলো , তখন আমি আমার পায়ের কাঁটা জায়গাটা মাকে দেখালাম। বললাম যে আমি হাটতে পারি না। তবুও আমার মা বিশ্বাস করল না। বলপূর্বক নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করল। আমি অস্বীকৃতি জানালেও, নিয়ে যায় আমাকে। কিন্তু আমি সেদিন একজন নায়কের মতো অভিনয় করলাম। একদম হাটতে পারি না ! দুই কাঁধে দুই জনের উপর ভর করে যাইতে হচ্ছে। কি অভিনয়! শেষ পর্যন্ত এক বন্ধুকে নিয়ে হাসপাতালে যাইতে হয়েছিল। (আলহামদুলিল্লাহ)

সে বছর আমি কোন দূর্গার মূর্তি দর্শনই করিনি। আমি বাড়িতে গেলে কোন ধরনের গোস্ত খাইতাম না। কিন্তু হোস্টেলে খাইতাম। তার জন্য আমার মা-বাবা সন্দেহ করতো। মনসা পূজার সময় আমি কোন গোশত খাই নাই, আলহামদুলিল্লাহ। আবার কোরবানি ইদের সময় কুরবানীর বন্ধে বাড়িতে চলে এসেছিলাম। আমি ঠিক এক কাজটিই করেছিলাম যেটা করেছিলাম রোজার ঈদের সময়। বোনের বাড়ি গিয়েছিলাম এবং সেখানে ভাগ্যক্রমে নামাজও পরি।

2019 সালের শেষের দিকের কথা যখন আমার টেস্ট পরীক্ষা শেষ হয়েছিল, আমি তখন বাড়ীতে বেড়াতে গিয়েছিলাম। সেখানে বন্ধুরা আমার গ্রামের স্কুলে পিকনিক করছিল, আমাকেও নিমন্ত্রণ করেছিল, রাত্রে সেখানে খেয়ে বাড়ি আসি। সকাল ছয়টায় আমার বাবা আমার হাত থেকে ঘ্রাণ নিচ্ছিল। বুঝতে পারলো যে আমি রাত্রে মাংসের তরকারি খাইছি। এই যে শুরু করে দিল এই সেই বলে শেষ পর্যন্ত বলে বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে। আমিও চলে আসি আমার হোস্টেলে। আমি অনেক কেঁদেছিলাম।

কিছুদিন পরে মা আসে মাকে আমি ইসলাম গ্রহণের জন্য দাওয়াত দেই।

তিনি বলেন যে সব ঠিক আছে কিন্তু আমাদের বাপ-দাদারা করে এসেছে । আমার মা বলেছিল তুই যদি আমাকে বেদের মধ্যে দেখাতে পারিস যে ইসলামই একমাত্র সত্য ধর্ম তাহলে আমি মুসলমান হব। কিন্তু আমি তা দেখাতে পারিনি বিভিন্ন কারণে। তার মধ্যে আমাকে হোস্টেলে না রাখার পরিকল্পনা হয়েছিল। অনেক চেষ্টায় হোস্টেলে থাকি। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে পরীক্ষার পরে আমি বাড়ি ছেড়ে চিরদিনের জন্য আল্লাহর দিকে চলে যাব। পরীক্ষা চলছে। এদিকে আমার সব ধরনের প্রস্তুতিও চলছে। শেষ পরীক্ষা অর্থাৎ ব্যবহারিক পরীক্ষা ছিল জীববিজ্ঞান। আমি পরীক্ষার হলে চলে গেলাম। এদিকে আমার জন্য লোহা গাড়ি এবং বিমানের ফ্লাইট সব প্রস্তুত।

৩ঃ৫০ মিনিটে ফ্লাইট।

কিন্তু এর দুইদিন অন্য পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু আল্লাহ তায়ালার সাহায্য এমনিতে এসেছিল। সেইদিন আমার পরীক্ষা ছিল ১১ টা থেকে ১ঃ০০ টায় । কিন্তু আমি ভুলে বলে ফেলেছিলাম ২ টা থেকে ৪ টা। পরে বুঝতে পারি আল্লাহ তালা আমার মঙ্গলের জন্য এইটা করেছেন। আমার পরীক্ষা 12 টা ১৫ মিনিটে শেষ হয়েছিল। দ্রুত নেমে গাড়িতে উঠি। কক্সবাজার নামাজ পড়ে এয়ারপোর্টে ঢুকে পড়ি। পরে বাংলাদেশ বিমানে করে চলে আসি আমার গন্তব্য স্থলে।

আমি তাবলীগের জামাত এ গিয়েছিলাম। পরে আমার পরিবার স্কুলে নামে মামলা দেওয়ার হুমকি দেয়। আমাকে চাপে পড়ে চলে আসতে হয়।

Similar Posts

One Comment

  1. আল্লাহ তাকে ভালো রাখুক।
    এখন অনেকটা অপরিচিত আর গুরাবা গয়ে গেছে।
    কি নির্মম একাকিত্বে কবর..:)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *