গল্পটি-আপনাকে-কাঁদাবেই-পর্ব-১৫

গল্পটি আপনাকে কাঁদাবেই পর্ব-১৫

আপনাদের আগে দুইজনকে এনেছিল। তাদের মধ্যে একজনকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে এইখানে নিয়ে আসছে আর খন্তি দিয়ে মারতে মারতে ২ বার অজ্ঞান করছে। এখানে সাধুর লাগবে শুধু টাকা, সংগঠনের লোকজন ধরে ধরে এখানে আনে আর তাদের পরিবার টাকা দিয়ে ছেলেমেয়েকে এখানে রেখে যায়।

আরও এমন অনেক ইতিহাস আছে এখানকার যা শুনে আমার ভয়ে শরীরের পশম দাঁড়িয়ে যেতো। যারা কোনোভাবে পালিয়েছে তাদের আশেপাশে নাকি এখনও এদের লোক থাকে সুযোগ পেলেই তুলে নিয়ে আসবে। প্রতি দুইমাস পর এখানে আমাদের মতো নওমুসলিমদের ধরে আনে আর যা মন যায় তাই করে, আপনারা গেলে আরও দুইজনকে আনবে।

এগুলো শুনার পর সারাক্ষণ টেনশন হতো কিভাবে আমি এদের থেকে বাঁচবো যদি আল্লাহ আমাদের না বাঁচায় তাহলে তো কোন রাস্তা দেখছি না। ভাবলাম চট্টগ্রামে থাকবো না আর অন্য কোথাও চলে যাবো। কিন্তু এদের লোকজন নাকি চারিদিকে ছড়ানো। যেখানে থাকবো সেখান থেকেই তুলে নিয়ে আসবে।

কাজের ফাঁকে ফাঁকে তাদের সাথে খেলা করি,মৌমাছির বাসা ভেঙ্গে মধু খাইতাম, তারা পাখি, গিরগিটি এগুলো শিকার করে রান্না করে খাইতো যা আমার এত ঘৃণা লাগতো। তাদের থেকে মারামারির অনেক কৌশল শিখতাম। কিভাবে কুঠার ধরা লাগে, লাকরি ফালা করা লাগে এগুলো ওদের কাছ থেকেই শিখে নিলাম মোটামোটি অনেক কিছু।

তারা পাহাড়ে থেকেও কুংফু, কেরাতি সব পারে। আমরা মনে করি আসলে শহরের জীবনযাপন করা মানুষরা অনেক এগিয়ে, কিন্তু আমি মনে করি ভুল, যারা পাহাড়ে বসবাস করে তারা আমাদের চাইতে সবচাইতে বেশি এগিয়ে, তারা যেকোনো দুর্যোগ আসলে তা মোকাবেলা করার সক্ষমতা রাখে। কিন্তু আমরা নিজেদের অনলাইন জগৎ থেকে বাস্তবতায় আসতে পারলাম না।

হাদিসে পাহাড়কে এমনি এমনি বরকতময় জায়গা বলা হয়নি। সেখানে একটা কুকুরও ছিলো। সারাক্ষণ আমি যেখানে যাই সেখানে পিছে পিছে যাই। রাতে বাইরে ঠান্ডা থাকায় আমার কক্ষের ভিতরে ঢুকে ঘুমাতো। আদরের ছিল আমার অনেক। মাঝে মাঝে বিছানায় শুয়ে বাইরে দেখতাম সে উঠানের মাঝখানে বসে আছে আর আজান এর আওয়াজ শুনলে চিল্লাই উঠে।

এইটা মনে হয় সবাই শুনেছেন আজানের সময় কুকুরের আওয়াজ। ছোটবেলায় মনে করতাম আজান দিলে কুকুর দুঃখে কান্না করে। পরে হাদিস থেকে জানতে পারি আজান এর সময় কুকুর শয়তান কে বাতাসে ছুটাছুটি করতে দেখতে পায়। তাই আজান দিলে কুকুর আওয়াজ করে। অনেকে এর বিভিন্ন সাইন্টেফিক ব্যাখ্যা দেয় কিন্তু আমার ধর্মীয় ব্যাখাটাই বেশি গ্রহণযোগ্য বলে মনে হয়েছে।

একটা সরকারি কলেজের প্রফেসর আসতো তার স্ত্রী আমি যে স্কুলে পড়তাম সেখানকার হিন্দুধর্ম টিচার। আমার স্কুলের অনেক হিন্দু টিচারও নাকি এই সংগঠন এর সাথে জড়িত এবং তারা গোয়েন্দা হিসেবে কাজ করে। আমার আব্বু বাসা থেকে আমার বইখাতা গুলো দিয়ে যায়।

রাতে ফ্রি বসে থাকি তার চাইতে ভালো বই পড়ে সময় কাটাই। মাঝে মাঝে জয়ন্ত আমাকে বাইনারি অংক শিখাইতো। সে ক্লাস ১০ এ পরে অথচ আমার ইন্টারের বাইনারি অংকগুলো করে দিতো। প্রচুর ট্যালেন্ট ছিল মাশাআল্লাহ।

বাবা প্রতি সপ্তাহে এখানে এসে আমাকে দেখে যেতো, আর সাধুকে মোটা অংকের টাকা দিয়ে যেতো। প্রতিবার অনেক আশা নিয়ে মনে করতাম যে এইবার আসলে তাদের যেকোনো ভাবে হোক মানিয়ে বাসায় যাবো। অনেক আকুতি মিনতি করতাম কিন্তু প্রত্যেক বার আমাকে রেখেই চলে যেতো আর আমি হতাশ হয়ে যেতাম।

প্রতি রাতে কাউকে না দেখিয়ে কান্না করতাম। আজান দিলে কাউকে না দেখিয়ে অজু করে আমার কক্ষের ভিতরের একটা কক্ষে নামাজ পড়তাম আমি আর ওইভাই। যেহেতু আমি নামাজের সূরা কেরাত কিছুই পারতাম না, সূরা ফাতিহার কয়েকটা আয়াত পারতাম তাই ওটা দিয়েই নামাজ পড়ে নিতাম।

আর ভাই বসে বসে ইশারায় নামাজ আদায় করে নিতো। নামাজে আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করে সাহায্য চাইতাম। কিছুদিন পর ভাইকে আমার কক্ষে একসাথে থাকতে দেওয়া হয়। আমার উপর থেকে তাদের সন্দেহ কিছুটা উঠে গেলেও ওর উপর সন্দেহ থেকেই যেতো। মাঝে মাঝে আমার সাথে আস্তে আস্তে নাশিদ গাইতো আমার পছন্দের।

“আসুবহু বাদামিন তলা আতি হি ওল্লাইলু দাজামিল ওয়া ফিরতি হি…”

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *