মোহাম্মদ আবদুল্লাহ সাঈদ (জুয়েল শীল)

আমাদের ভাই মোহাম্মদ আবদুল্লাহ সাঈদ (জুয়েল শীল)-এর স্বলিখিত আত্মজীবনী (পর্ব-৫)

আমাদের ভাই মোহাম্মদ আবদুল্লাহ সাঈদ (জুয়েল শীল)-এর স্বলিখিত আত্মজীবনী (পর্ব-৫)

(১১ জানুয়ারি,২০২৩ইং-এ তেজগাঁও এলাকায় ট্রেন দূর্ঘটনায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে। নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা তাকে অনেক ভালো রেখেছেন।)

=================================

ওদিকে আমার ছবি ফেসবুক পত্রিকাতে ভাইরাল হয়েছিল। আমাকে নাকি জোর করে ধর্মান্তরিত করা হয়েছে। আল্লাহর কসম আমি নিজের ইচ্ছায় ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছি। আমি বাড়ি যাওয়ার আগের রাত্রে আল্লাহর দরবারে অনেক কান্নাকাটি করেছি। কুমিল্লায় নেমে তাহাজ্জুদ নামাজ ও সাতকানিয়ায় ফজরের নামাজ পড়ি। আমি আমাদের একজন স্কুলের শিক্ষকের বাড়িতে চলে যাই সেখান থেকে আমি উপজেলা নিবার্হী অফিসারের কাছে যাই।

কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে আমি ইউএনও স্যার কে পাইনি। আমি প্রায় ৪-৫ ঘন্টা দাঁড়িয়ে ছিলাম। দুইটার দিকে UNO স্যার অফিসে এলে আমি সাথে সাথে অফিসে ঢুকে পড়ি। আমি অফিসে ঢুকতে না ঢুকতে আমার পরিবারের লোকজন এসে পড়ে। আমার বয়স কম বিধায় UNO কিছু করতে পারে নাই। তারা আমাকে টেনে হিঁচড়ে রাস্তা দিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। আমার পাঞ্জাবি অর্ধছেরা করেছিল। একজন মুমিনের সবচেয়ে বড় সম্পদ আত্মসম্মান। কিন্তু আমি আমার সব সম্মান আল্লাহর জন্য উৎসর্গ করেছি। টমটমে করে তারা আমাকে একটা রুমের মধ্যে নিয়ে যায়। আমাকে বিভিন্ন হুমকি দেয়, মন্দিরের মধ্যে আটকে রাখবে ইত্যাদি ইত্যাদি ।

আমি বলি আমাকে টুকরা টুকরা করলেও আমি ইসলাম ছাড়বো না। আমার বাবা আমার পা পর্যন্ত ধরতে চেয়েছিল। মা-বাবা কাঁদেছে এবং তাদের ধর্মে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য আকুতি মিনতি করেছে। একদিকে মা বাবার ভালোবাসা অন্যদিকে আমার আল্লাহর ভালোবাসা। আমি আল্লাহর ভালোবাসাটাই বেছে নিলাম যা হওয়ার হবে। আমাকে তারা অনেক কিছুর লোভ দেখিয়ে ছিল। কিন্তু সে লোভ আমাকে গ্রাস করতে পারেনি।

আমাকে মানসিকভাবে নির্যাতন করে থানায় নিয়ে যায়। ওসির সাথে বিভিন্ন কথা হয়, আমি আল্লাহ ছাড়া কাউকেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। তন্মধ্যে আমার মাথায় একটি বুদ্ধি আসে যে, আমি বাড়ি চলে যাব, স্কুলের নামে মিথ্যা জিডি তোলার ব্যবস্থাও করব। আমাকে একদিন থানায় রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। থানায় আমার মা-বাবাও আমার সাথে থেকেছিল। বাড়ি নিয়ে গেলে আমার চলে আসতে কষ্ট হবে তাই মামার বাড়িই বেছে নিলাম। পরের দিন অনেক সমস্যা কাটিয়ে ৩ টার সময় আমাকে নিয়ে যায় মামার বাড়ি কক্সবাজারে। চলে যাওয়ার পরে আমি এমন ঝামেলায় পড়লাম যা বলার মত না। বাড়ি থেকে বের হতে দেয় না টাকা দেয় না। — আসলে তারাও বুঝতে পেরেছিল যে আমি কেন থানায় ওই পলিটিক্স খেলে ছিলাম। সাপও মরল লাঠিও ভাংলো না। এটাই আমি করেছিলাম।

প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর পরিকল্পনায় সবচেয়ে বড় পরিকল্পনা। তন্মধ্যে আমাকে কক্সবাজার সদরে বোনের বাসায় নিয়ে যায়। সেখান থেকে আমাকে ইসকন মন্দিরে নিয়ে যাওয়া হয়। আলহামদুলিল্লাহ সেখানে আমাকে কিছুই করাতে পারে নাই। পরে চলে আসি। আমাকে বৈদ্যর কাছে নিয়ে গিয়েছিল। আমি নাকি পাগল হয়ে গিয়েছি, আমাকে মুসলিমরা নাকি পাগল করে ফেলেছে। একদিন আমাকে বৌদ্ধ মন্দিরে নিয়ে যায়। আমি চিকিৎসা করতে রাজি না হওয়ায় আমাকে নিয়ে আসা হয় মামার বাড়ি। গাড়ি থেকে নামার পরই আমি থাকবো না বলে বায়না ধরলাম। আমার মা কিন্তু বুঝতে পেরেছিল যে আমি আর থাকব না। তাই তারা বাড়ির দিকে চলে গেল। আমিও এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে রওনা দিলাম।

আমি ৪ টা ৪৩ মিনিটে বাড়ি থেকে বের হয়ে যাই। আমি প্রায় 3 থেকে 6 -7——- কিলোমিটার হাঁটার পর একটি মসজিদে আসরের নামাজ টা আদায় করি। আমার পকেটে একটা টাকাও ছিল না। আবার হাটা শুরু করি, প্রায় তিন কিলোমিটারের মতো হেঁটে আরেকটা মসজিদে মাগরিবের নামাজ পড়ি। আল্লাহর কাছে দোয়া করি যেন আমি যেকোনোভাবে আমার উপজেলায় চলে আসতে পারি। তখন প্রায় ৭ টা ৪৫ মিনিট। আমি হাঁটছি দুই পাহাড়ের মাঝখানে যেখানে ঝিমঝিম ও উদ্ভট আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। ভয়ও লাগছে তাই দোয়া ও সূরা পড়া শুরু করলাম। ওদিকে শয়তান ওয়াসওয়াসা দিচ্ছে যে বাড়ি চলে যা, না হলে তুই কোথাও যেতে পারবি না। আমি ওইদিকে কান দেই না। আমি মহান রব্বুল আলামীন এর উপর তাওয়াক্কুল করে হাঁটছি। তখন রাত প্রায় আটটা। আমি একটা ছেলের কাছে জিজ্ঞাসা করি যে মেইন রোড কত দূরে। সে বলল প্রায় ৫-৬ কিলোমিটার। আমি বললাম আমি তো রাস্তা চিনি না।

আমি কিন্তু সেদিন ভাত খাইছিলাম সকালে আর বিকেল চারটার দিকে হালকা নাস্তা করেছিলাম। আমি আরেকটা ছেলেকে সিএনজির ব্যবস্থা করতে বলি। সে আমাকে একটা দোকানে নিয়ে যায়। দোকানদার দ্বীনদার ছিল।

আরেকটা কথা যেখানে বান্দারা সামর্থ্য শেষ সেখানে আল্লাহর সাহায্য শুরু যেমনটা হয়েছিল মুসা আলাইহি ওয়াসাল্লাম, ইউনুস আলাইহিস সালাম ও মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সালাম এর বেলায়। আমাকে সিএনজিওয়ালা দোকানে নিয়ে গিয়ে নাস্তা খাওয়ালো। তারপর দোকান ওয়ালা আমাকে 50 টাকা হাদিয়া দিয়ে সিএনজিতে তুলে দেয়।

সিএনজির মধ্যে একটা ছেলেকে আমার এই কথাগুলো বলি সে খুব খুশি হয় এবং আমাকে নিয়ে রামু চলে যায়। সেখানে তার হোটেলে নিয়ে গিয়ে ভাত খাওয়ায় তারপর গাড়িতে তুলে দেয়।

চকরিয়া নেমে সেখানে এক ভাইয়ের দোকানে যাই তার সাহায্যেই চলে আসি আমার গন্তব্য স্থানে। আল্লাহর রহমতে আমি এখন অনেক অনেক সুখে আছি। যা আমি মুখে প্রকাশ করতে পারবো না। আলহামদুলিল্লাহ!

============================

(আমরা তার ভাই-গণ আশা রাখি- পরকালে এখন আল্লাহ তায়ালার কাছে নিশ্চয়ই সে ভালো আছে।)

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *