এফিডেভিট করার নিয়ম: একজন নতুন মুসলিম বা নব মুসলিম বা নওমুসলিমকে কীভাবে অ্যাফিডেভিট (এফিডেবিট) AFFIDAVIT করতে হয়?
(নোটঃ প্রত্যেক সন্তানই ইসলামী ফিতরাতের উপর জন্মগ্রহণ করে থাকে। অতঃপর তার মাতা-পিতা তাকে ইয়াহুদী, নাসারা অথবা অগ্নিপূজক বানিয়ে ফেলে। (বুখারী ১৩৫৮, মুসলিম ২৬৫৮)। অমুসলিম পরিবারে জন্ম নেয়া ব্যক্তি ইসলামি ফিরে এলে তাকে এ দেশের পরিভাষায় নওমুসলিম বা নতুন মুসলিম বা নব মুসলিম বলে)
ইসলাম গ্রহণের পর অনেক ভাই ও বোন পেরেশানির মধ্যে পড়ে যায়। কী করতে হবে বুঝে উঠতে পারেন না। আপনাদের সহযোগিতায় নওমুসলিম কাউন্সেলিং সেন্টার সর্বদা আপনাদের পাশে রয়েছে।
কোনো আলেমের নিকট কালেমা পড়ার পরেই দেশের আইন অনুযায়ী প্রথমে যে কাজটি করতে হবে তা হচ্ছে হলফনামা বা AFFIDAVIT বা অ্যাফিডেভিট।
এফিডেভিট করার নিয়ম:
১. শাহাদাত পাঠ: প্রথমে নওমুসলিমকে দুই কালেমা বা শাহাদাতের সাক্ষ্য দিতে হবে। এর মাধ্যমে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন।
২. সাক্ষীর উপস্থিতি: কমপক্ষে দুইজন সম্মানিত মুসলিম সাক্ষীর উপস্থিতিতে এফিডেভিট সম্পন্ন করতে হবে। তারা এফিডেভিটে স্বাক্ষর করবেন।
৩. নাম পরিবর্তন: যদি নওমুসলিমের পূর্বনাম অ-ইসলামী হয়, তাহলে তাকে একটি নতুন ইসলামী নাম গ্রহণ করতে হবে। এই নতুন নামটি এফিডেভিটে উল্লেখ থাকবে।
৪. বয়স ও পরিচয়: নওমুসলিমের বয়স, পেশা, জন্মস্থান এবং পিতা-মাতার নাম এফিডেভিটে উল্লেখ থাকবে। তার জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যও থাকতে পারে।
৫. ইসলাম গ্রহণের কারণ: এফিডেভিটে তার ইসলাম গ্রহণের কারণ বা অভিপ্রেরণা উল্লেখ থাকতে পারে।
৬.স্বাক্ষর: নওমুসলিম নিজে এফিডেভিটে স্বাক্ষর করবেন এবং তারিখ উল্লেখ করবেন।
অ্যাফিডেভিটের (এফিডেবিট) জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র:
ভোটার আইডি কার্ড বা জন্ম সনদ, এক কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি। যদি অ্যাকাডেমিক কোনো সার্টিফিকেট থাকে সেই তথ্যগুলো অ্যাফিডেভিটে উল্লেখ করলে ভালো হয়।
এফিডেভিট এর খরচ:
নিজে AFFIDAVIT বা অ্যাফিডেভিট করতে ১০০ টাকা মূল্যের ৩টি স্ট্যাম্প প্রয়োজন হবে। প্রত্যেকটির দাম নিবেন ১১০ থেকে ১২০ টাকা। সর্বমোট ৩৩০ থেকে ৩৬০ টাকা।
কম্পিউটারের দোকানে গিয়ে কম্পোজিং করাতে হবে। নিজের নাম, পিতার নাম, মাতার নাম, গ্রাম, জন্ম সাল, এনআইডি নম্বর, কত তারিখে ইসলাম গ্রহণ করেছেন, আপনার পূর্বের নাম কী ছিল, বর্তমান নাম কী হবে এই জিনিসগুলো উল্লেখ থাকবে। আপনাকে ইসলাম গ্রহণ করতে বাধ্য করা হয়েছে কিনা এ ধরনের স্বীকারোক্তি থাকবে। দোকানে ফরম্যাট রেডি করাই থাকে শুধু নাম-ঠিকানা গুলো পরিবর্তন করতে হয়। খরচ নিবেন সর্বোচ্চ ১০০ (একশত) টাকা।
এরপর একজন অ্যাডভোকেটের স্বাক্ষরের প্রয়োজন হবে। স্বাক্ষর নেয়ার পরে কোর্টে গিয়ে স্ট্যাম্প জমা দিবেন। অনেক সময় কোর্টে জমা দিতে প্রায় ৫০০ (পাঁচশত) টাকা নেয়।
আপনাকে কোর্টে ডাকা হবে, আপনার আইডি কার্ড দেখতে চাইবে, আপনাকে কালেমা-ই তাইয়্যেবা পড়তে বলতে পারে। কোনো ম্যাজিস্ট্রেট চাইলে ভেরিফিকেশনের জন্য আপনার বাড়িতে পুলিশ পাঠাতে পারে।
কোন কোন জেলা থেকে AFFIDAVIT বা অ্যাফিডেভিট (এফিডেবিট) করতে পারবেন:
যেকোনো কোর্ট থেকেই অ্যাফিডেভিট করতে পারলেও বর্তমানে রোহিঙ্গা ইস্যুর কারণে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এর জন্য নিজ জেলা থেকে যাওয়াই উত্তম। তবে ঢাকা জর্জ কোর্ট থেকে যেকোনো জেলার অ্যাফিডেভিট বা হলফনামা করা যায়। কোনো ক্ষেত্রেই নোটারি গ্রহণযোগ্য নয়। অবশ্যই অ্যাফিডেভিট প্রয়োজন হবে। (নোটারি : অ্যাডভোকেটের স্বাক্ষরে হলফনামা; অ্যাফিডেভিটঃ ম্যাজিস্ট্রেট-এর স্বাক্ষরে হলফনামা) বি. দ্র. অ্যাফিডেভিটকারীকে অবশ্যই ১৮ (আঠারো) বছর বয়সী বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে
একজন নতুন মুসলিম বা নওমুসলিমের জন্য অ্যাফিডেভিটের (এফিডেভিট) বা শপথপত্র কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ ?
১. ইসলামী বিশ্বাস গ্রহণের সাক্ষ্য হিসেবে: এফিডেভিট একজন নওমুসলিমের ইসলাম গ্রহণের লিখিত প্রমাণ এবং তার নতুন বিশ্বাসের স্বীকৃতি হিসেবে কাজ করে। এটি তার জীবনে এই গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের একটি আনুষ্ঠানিক রেকর্ড গঠন করে।
২. আইনগত স্বীকৃতি: কিছু দেশে এফিডেভিট আইনগতভাবে নওমুসলিমের নতুন ধর্মীয় পরিচয়কে স্বীকৃতি দেয়। এটি তাকে মুসলিম হিসেবে বিভিন্ন অধিকার এবং সুবিধা পাওয়ার সুযোগ করে দেয়।
৩. সামাজিক স্বীকৃতি: এফিডেভিটের মাধ্যমে একজন নওমুসলিম তার নতুন বিশ্বাস ইসলামী সম্প্রদায়ের কাছে প্রকাশ করে। এটি তাকে মুসলিম সমাজে গ্রহণ ও সামাজিক স্বীকৃতি লাভে সহায়তা করে।
৪. দলিলপত্র হিসেবে: ভবিষ্যতে প্রয়োজনের ক্ষেত্রে এফিডেভিট তার ইসলাম গ্রহণের একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল হিসেবে কাজ করবে। যেমন – বিবাহ, মৃত্যু নিবন্ধন ইত্যাদিতে।
৫. আধ্যাত্মিক গুরুত্ব: একজন নওমুসলিমের জন্য এফিডেভিট তার নতুন বিশ্বাসের প্রতি আন্তরিক প্রতিশ্রুতির প্রতীক হিসেবে আধ্যাত্মিক গুরুত্ব বহন করে।
সুতরাং, এফিডেভিট একজন নওমুসলিমকে তার নতুন জীবনযাত্রায় পরিচিতি এবং আইনগত স্বীকৃতি প্রদান করে এবং তার ইসলামী বিশ্বাসকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়।