আমাদের ভাই মোহাম্মদ আবদুল্লাহ সাঈদ (জুয়েল শীল)-এর স্বলিখিত আত্মজীবনী (পর্ব-২)

আমাদের ভাই মোহাম্মদ আবদুল্লাহ সাঈদ (জুয়েল শীল)-এর স্বলিখিত আত্মজীবনী (পর্ব-২)

(১১ জানুয়ারি,২০২৩ইং-এ মেডিকেল কলেজে ভর্তিচ্ছু ভাইটি তেজগাঁও এলাকায় ট্রেন দূর্ঘটনায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে)

—————————————————————


আমি ২০১৭ সালে অষ্টম শ্রেণীতে উপজেলার একটি স্কুলে ভর্তি হই।ছাত্রাবাসেই থাকতাম আমার কিছু মুসলিম বন্ধু আমাকে তাদের ধর্ম সম্পর্কে বলতো। আমি তাদের কথা শুনতাম,আমিও তাদের হিন্দু ধর্ম সম্পর্কে বলতাম। তারা আমাকে বলতো আমাদের কুরআনুল কারীমে এই পর্যন্ত কেহই একটা পর্যন্ত ভুল ধরতে পারে নাই পারবেও না। তখন আমি ডক্টর জাকির নায়েকের বিভিন্ন ভিডিও গুলো দেখতাম রবিশংকর ওনার সাথে বিতর্কে হেরে যেতেন। জাকির সাহেব বলেন যে গীতার মধ্যে অনেক ভুল আছে আর রবি শংকর বলে প্রিন্টিংয়ে সমস্যা কিন্তু সে কোরআন সম্বন্ধে কোনো ভুল দেখাতে পারেনি।

তখন কলরবের একটা গজল শুনে আমার অন্তরটা পরিষ্কার হয়ে যায়। গজলটি ছিল আল্লাহ আল্লাহ আল্লাহ শুকনো এই মরুভূমিতে দাও তোমার প্রেমের জল……… অন্যদিকে হিন্দু ধর্মের বিভিন্ন কুসংস্কার পছন্দ করতাম না।

আমি ছাত্রাবাসের প্রজেক্টর-এর পর্দায় ইউসুফ জুলেখার কাহিনী টা দেখি। সেখানে কিছু মানুষ মূর্তি ভেঙ্গে ফেলে কিন্তু মূর্তিগুলো তাদের একটাও প্রতিক্রিয়া জানাতে পারলো না।আবার কৃষ্ণ নাকি স্বয়ং ভগবান ? ভগবান যদি পৃথিবীতে চলে আসেন তাহলে মহাবিশ্ব নিয়ন্ত্রণ করছে কে ? সৃষ্টিকর্তা কি এতই দুর্বল যে পৃথিবীর মানুষকে ঠিক করার জন্য তাকে পৃথিবীতে আসতে হবে ? এসব প্রশ্ন আমার মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছিল । যারা মূর্তি বানায় তারা দেবীর বিভিন্ন অঙ্গ স্পর্শ করে। নিজে বানিয়ে নিজে পূজা ! কিভাবে এই বানানো মূর্তির কাছেআমি মাথা নত করি ? এতো আমার সে উত্তম না আমি যা করতে পারি সে তো তা করতে পারেনা।

আবার জাকির নায়েকের ভিডিও তে দেখি হিন্দু ধর্মে নাকি মূর্তি পূজা নিষেধ । সে বল্লো মে, যজুর্বেদ এর ৪০ নং অধ্যায় এর ৯ নং মন্ত্রে বলা হয়েছে অন্ধাম তম প্রবিশন্তি যেহসংভুতিমুপাশচতে

ততো ভুয় ইবতে তমো য উ সমসমভূত্যা রতা———–:”পরে বেদে খুলে দেখি ঠিকই আছে।

মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে

“ইদংজনা উপশ্রুত নরাশংস স্তবিষ্যতে”(অথববেদ ২০ ———-::কান্ড ৯ অনুবাদক,৩১ সূকত,অপকুনতাপ সূকতানী পূ ৩৯৬)

অর্থ: লোকপাল, শ্রবন করো।নরাশংস (পসংশিত ব্যক্তি) এর স্তুতিগান করা হচ্ছে।

নরাশংস–অর্থ প্রশংসিত মানুষ যা আরবি করলে হয় মুহাম্মদ।

শ্রীমৎ ভাগবত মহাপুরাণ দ্বাদশ স্কন্ধ দ্বিতীয় অধ্যায় ১৮ নং শ্লোক”সম্বল গ্রাম মুখ্যস্য ব্রাহ্মণস্য মহাত্মন”

ভবনে বিষ্ণুযশ স: কল্কি প্রাদুর্ভাব বিষ্যতে”।

সংস্কৃতি থেকে আরবি করলে ঠিক একই অর্থই দাঁড়াবে।

এই মন্ত্র গুলো দেখার পরে আমার মন বলছিল যে হিন্দু ধর্মের লোকেরা এইসব গ্রন্থ থেকে দূরে ।এমনও মানুষ আছে যারা এই বেদ কোনদিন দেখেইনি । কেন ? এখন ইসকন হিন্দু ধর্মকে পরিবর্তন করছে। নতুন একটা ধর্ম প্রচার করছে। যে ধর্মের মানুষেরা নিজেদের ধর্মগ্রন্থ পরিবর্তন করতে পারে সেটা কেমন ধর্ম ? এটা স্রষ্টা প্রদত্ত ধর্ম কখনো হতে পারে না।

আমার মন বলছিল যে সত্য হয় একটা, আর মিথ্যা হয় অসংখ্য। হিন্দু ধর্ম যখন আমার কাছে পুরোপুরি মিথ্যা প্রমাণিত হলো ,তখন আমি খ্রিস্টান ও বৌদ্ধ ধর্ম দেখলাম। দেখলাম সেখানেও মূর্তিপূজা বিদ্যমান। অন্যদিকে কুরআন এমন একটা গ্ৰন্থ যেটা কথা বলতে পারে। কুরআন এমন একটা কিতাব তাকে যে প্রশ্নই করা হয় সে তারই উত্তর দিতে পার । আল্লাহ তাআলা সুরা বাকারার 23 -24 নং আয়াতে ওপেন চ্যালেঞ্জ করেছেন——-_—-++।

আজ পর্যন্ত কেউই মোকাবিলা করতে পারে নাই, পারবেও না। অবিকৃত কুরআন যা ১৪৫০ বছরেও একটা অক্ষর পর্যন্ত এদিক-ওদিক হয় নাই। কেন? নিশ্চয়ই এটি আল্লাহর কিতাব আর আমার আল্লাহ আমাকে বলছে, আল্লাহর কাছে একমাত্র মনোনীত ধর্ম হলো ইসলাম। (আলে ইমরান আয়াত নং ১৯)।

পরিশেষে ২০১৮ সালের মার্চ মাসেই শাহাদা পাঠ করে মুসলমানদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাই। তখন আমার নাম হয় মোহাম্মদ আবদুল্লাহ সাঈদ।

আলহামদুলিল্লাহ ! আমি সেদিন আমার অন্তরে প্রশান্তি অনুভব করেছিলাম। হোস্টেলে ছিলাম ,হিন্দু স্যার ছিল নামাজ পড়তে পারতাম না। আমি মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে আমাকে খাতনা করতে হবে। তাই আমার মা বাবাকে বললাম যে আমার প্রসাবের সমস্যা তাই আমাকে খাৎনা করাতে হবে। তারাও বলল যে ঠিক আছে। কুরবানীর সময় অর্থাৎ জিলহজ্ব মাসে খৎনা করে ফেললাম। নবীজির এই সুন্নাতটা আমাকে অবাক করতো। কি বিজ্ঞানসম্মত সুন্নাত! “আল্লাহু আকবার”।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *