গল্পটি আপনাকে কাঁদাবেই পর্ব-৮
সাধু বললো, প্রথম প্রথম তারা তোমাকে অনেক বাহবা দিবে তারপর আস্তে আস্তে দেখা যাচ্ছে তোমাকে সেই ডান্ডি বলেই খেপাবে, তোমাকে তাদের ইশারায় নাচাবে, তোমার অতীত জীবন নিয়ে খোটা দিবে (এবং মজার কথা তার প্রত্যেকটা কথা আমার বাস্তব জীবনে হুবুহু মিলেও গেছে)।
অপু বিশাস এর কি অবস্থা হইছে দেখো নাই? আমাদের কারও তোমার সাথে কোন শত্রুতা নেই, তুমি শুধু নিজের কৃতকর্মের ফল পাচ্ছ। (তারা মুসলিম আর ইসলাম বলতে অপু বিশ্বাস আর শাকিব খানকে বুঝে, তাই আপনারা যারা ইসলামকে জানতে চান তারা ইসলামকে দেখে ইসলাম জানার চেষ্টা করেন, মুসলমান ব্যাক্তি দেখে কখনও ইসলামকে যাচাই করা ঠিক নয়, কারণ মুসলমান ব্যক্তির ভুল আছে কিন্তু ইসলামে কোন ভুল নেই)। তারপর কথা শেষে আমাকে কক্ষে নিয়ে বসায়।
বিকাল ৩/৪ টার দিকে ছেলেগুলো আবার এসে আমাকে বিরক্ত করা শুরু করল। আমাকে নিয়ে হাসাঠাট্টা-মজা করছিলো। কিন্তু আমার কিছুই করার ছিলনা, এগুলো হজম করা ছাড়া। তারপর আবার আমাকে উঠিয়ে মন্দিরের পিছনে নিয়ে যায়, তারপর একটা চেয়ারে নিয়ে বসায়।
তারা ভিডিও কলে বিভিন্ন মানুষের কাছে আমাকে দেখায় আর ইচ্ছে মতো গালাগালি করে। যেন আমি এক চিড়িয়াখানার পশু, যে যার মতো মেরে চলে যাচ্ছে। তাদের সংগঠনের বিভিন্ন গ্রুপে আমার ছবিও ভাইরাল করে দিচ্ছে। জোর করে তুলশি গাছে প্রনাম করায়। কিন্তু আবার সিগারেটও টানতে দিল। পরে আবার নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দেয়। দেখতে দেখতে সন্ধ্যা হলো। দূর থেকে কোথায় থেকে যেন আজানের শব্দ কানে আসলো। মনে একটু সাহস পেলাম হয়তো পাহাড়ের নিচে মসজিদ আছে। তাহলে তো মুসলমানও থাকবে।
হঠাৎ এক লোক আসলো আর আমাকে কাঁধে উঠিয়ে তাদের উপাসনালয়ে নিয়ে গেল। এমনকি ওয়াশরুমেও আমাকে ধরে ধরে নিয়ে যাওয়া লাগতো। এদিকে আস্তে আস্তে আমার শরীরে জ্বর আসা শুরু করলো। ঠান্ডায় কাঁপছি বসে বসে।
রাতে আমার ১০৪ ডিগ্রি এর কাছাকাছি জ্বর আসে। একে তো পুরো শরীরের ব্যথায় ছটফট করছি,তার উপর জ্বর। এ যেন এমন এক পরীক্ষা যা বলে বোঝানো যায় না। আমার এই অবস্থা দেখে আম্মু আসলো। আমি উনার সামনে বাচ্চার মতো কান্না করছি। মা আমাকে এই নরক থেকে নিয়ে যাও, আমার স্বাভাবিক জীবন আমাকে ফিরিয়ে দাও, তোমরা যেভাবে বলবে, আমি সেভাবে থাকবো তবুও আমাকে এখান থেকে বাঁচাও।
কিন্তু এ দেখি আমার মা না যেন অন্য কেউ! আমার এত কান্না কোন কিছুতেই তার মন গলে না। বললো না বাবা, তুই যেই কাজ করেছিস, এগুলো তোর কৃতকর্মের ফল! তোকে এইখানে থাকতে হবে বলেই আম্মু চলে গেল।
রাতের খাবারের জন্য আমাকে আশ্রমের কিছু ছোট ছোট ছেলে ডাকতে আসে। তাদের কাধে কোন রকম ভর দিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু আমার শরীরে বিন্দু পরিমান শক্তি নাই, বার বার পড়ে যাচ্ছি। কিন্তু তবুও কোনোভাবে এক পায়ে ভর দিয়ে গেলাম।
সাধু মাঝখানে বসেছে আর দুইপাশে দুইসারিতে সবাই খেতে বসেছে। আমাকে সাধুর বাম পাশে কোনায় নিয়ে বসালো। সেখানে আমার সাথে আমার মতো আরেক জন নওমুসলিম ভাইকে বসিয়েছিল। তাকে দেখে আমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। তার অবস্থা আমার থেকেও খারাপ। পুরো শরীরে দাগ হয়ে আছে, ফুলে আছে পুরো শরীর।
বুঝতে পারলাম আমার চাইতেও খারাপ ভাবে মেরেছে তাকে। তাকে আমি আসার একদিন আগেই এনেছিল ওইখানে । তারপর খাওয়া শেষে সবাই বাবাকে মাথা ঠেকিয়ে প্রণাম করছিল, আমাদেরও তাই করা লাগলো। তারা আবার আমাকে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিল। কিছুক্ষণ পর ডাক্তার আসলো আমার চেকআপ করতে, হাত ভাঙ্গে নাই কিন্তু হাতের কনুই আর পায়ের হাঁটুতে অনেক জোরে আঘাত লাগার কারণে লক হয়ে গেছে।
তাই কিছুদিন সময় লাগবে তবুও একবার এক্সরে করে নিলে ভালো হবে। এগুলো বলে একটা ব্যথার ইঞ্জেকশন আর হাত-পায়ের জন্য কিছু ওষুধ আর মলম দিয়ে বললো আরও তিনদিন ইঞ্জেকশন দেওয়া লাগবে। কালকে আবার আসবে বলে চলে গেল।
পুরো রাত আমি জ্বর,ঠান্ডা,ব্যথায় ছটফট করেছি আর ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না করেছি। কি দোষ আমার? শুধু আল্লাহ কে নিজের রব হিসেবে মেনে নিলাম এটাই কি আমার দোষ?