আমাদের ভাই মোহাম্মদ আবদুল্লাহ সাঈদ (জুয়েল শীল)-এর স্বলিখিত আত্মজীবনী (পর্ব-৩)
আমাদের ভাই মোহাম্মদ আবদুল্লাহ সাঈদ (জুয়েল শীল)-এর স্বলিখিত আত্মজীবনী (পর্ব-৩)
![](https://noumuslim.com/wp-content/uploads/2023/11/Abdullah-Sayed-vai.jpg)
(১১ জানুয়ারি,২০২৩ইং-এ তেজগাঁও এলাকায় ট্রেন দূর্ঘটনায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে)
=================================
২০১৮ সালের রমজান মাসে আমি সাতটা রোজা রেখেছিলাম আলহামদুলিল্লাহ। আমি বিভিন্ন ইসলামিক ভিডিও দেখতাম। পরে আমল করার চেষ্টা করতাম। 2019 সালের পহেলা মার্চের ঘটনা, আমি ঘুমাবার আগে উত্তমরূপে অজু করে ঘুমাতে গিয়েছিলাম। রাতে আমি স্বপ্নে দেখছি যে দুইটা দেশের মধ্যে গুরুতর যুদ্ধ সংঘটিত হতে যাচ্ছে। আমি যুদ্ধে একপক্ষে অংশগ্রহণ করেছি সৈনিক হিসেবে। বিপক্ষ দলের সৈন্যরা আসছে আমাদের দিকে। আমাদের সৈন্যরাও যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত। এদিকে কতগুলো সৈন্য নামাজ পড়ছে। কিছুক্ষণ পরে আমিও গেলাম নামাজ পড়তে। কিন্তু বাস্তবে আমি কিভাবে নামাজ পড়ে জানতাম না।
কিন্তু আল্লাহর অশেষ কুদরতে আমি এক রাকাত নামাজ পড়লাম। আমি ঘুম থেকে বুঝতে পারলাম যে এটা আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে আমার জন্য একটা আদেশ। পরে জানতে পারলাম এই নামাজকে সালাতুল খাউফ বলে। তাই আল্লাহর রহমতে সেদিন ফজর থেকে নামাজ পড়া শুরু করে দিয়েছে। আমি নামাজ পড়তাম চুরি করে। কখনো টোলের উপর কখনো বেলকুনিতে আবার কখনো দুই তিন কিলোমিটার দূরের মসজিদে। এই নামাজ ও রোজা আমার পুরো জীবনকে পরিবর্তন করে দিয়েছে। ইসলাম আমাকে অধ্যবসায়ী হাতে শিখিয়েছে। ইসলাম শিখায় কিভাবে দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়তে হয়। তাইতো কথায় বলে Islam is the complete code of life.
রমজান মাস চলছে। আলহামদুলিল্লাহ রোজা রাখাও শুরু করলাম। আমার মা বাবা আমাকে সন্দেহ করত। তারা আমাকে একদিন আম খেতে বলেছিল। আমি বলেছিলাম আমার বন্ধুরা রোজা রেখেছে তাই তাদের সামনে আম খাওয়া যাবেনা। তারা শেষ পর্যন্ত চলে গিয়েছিল।
আমাদের ছাত্রাবাস ১৭ রমজানে বন্ধ হয়ে যাবে। তাই আমি বুদ্ধি খাটিয়ে একজন স্যারের বাসায় থাকার অনুমতি দিলাম বাড়ি থেকে।
সেখানে আমার সময় খুব ভালোই কেটেছে। ২২ তম রমজানে আমাদের বাসার স্যার ইফতারের আয়োজন করেছিল। সেখানে ছয় সাত জন স্যার এসেছিল, সাথে একজন হিন্দু স্যার ছিল। প্রত্যেক দিনের মতো আমিও মাগরিবের নামাজ পড়তে চলে গেলাম। তখন হিন্দু সেই স্যারটি একজন মুসলিম ছেলেকে আমার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। সেও সব বলে দেয় আমার সম্পর্কে । আসলে ছেলেটির কোন দোষ ছিল না সে ভুলে সব বলে দেয়। স্যারটি বাড়িতে কল করে দিয়ে 7:31 এ। মা-বাবা আমাকে কল করে 10:52 তে।
মা আমাকে বলল যে তোর বাবার খুব অসুখ তোকে কাল বাড়ি চলে আসতে হবে। আমিও বিশ্বাস করলাম যে সত্যি মনে হয় অসুখ হয়েছে। সে রাত আমার আর কোনো ঘুম হয়নি ভয়ে। বাবার যদি এসময় কিছু হয়ে যায় তাহলে আমারই সবকিছু করতে হবে। সকাল 6 টায় আমাদের বাসায় মা হাজির। আমি ঘুমের মধ্যে ছিলাম। 6:42 এ আমি ঘুম থেকে উঠি।
আমার মা আমাকে বলছে যে রোজা কয়টা রেখেছিস, নামাজ পড়েছিস? আমি বলছি মা আপনি এগুলো কি বলেন? আমি নামাজ রোজা রাখতে যাব কেন। মা বলল ঠিক আছে বাড়ি চল। মার দিলে ঠিক হয়ে যাবি। গাড়িতে উঠার সময় মা একটি বড় কেক ও পানির বোতল নিয়েছিল। আমাকে খাইতে বললে আমি বললাম আমার পাশে এক মাওলানা বসে আছে, আমি খেতে পারবো না। আমরা বাড়িতে চলে যাই। আমি গিয়েই এমন একটা ঘুম দিলাম একেবারে চারটার দিকে উঠে ছিলাম । ঘুম থেকে উঠলে মা আমাকে ভাত খাইতে বলল, আমি বললাম খিদে নেই। বাজারের দিকে চলে গিয়েছিলাম। সেখানে আমার মা আমাকে দেখতে পেয়ে পেঁয়াজু খাইতে বলে। আমি পাঁচটা পিয়াজু নিলাম বললাম বাজারের মধ্যে খাওয়া যাবে না। বিলের মধ্যে হাটার সময় গালের মধ্যে চিবিয়ে ফেলি আমার সামনের দিকে গিয়ে ফেলে দেই। অবশিষ্ট চারটা দিয়ে ইফতার করেছিলাম। একদিন ঔষধ খাওয়ার সময় বিসমিল্লাহ বলে ছিলাম। আমার মা শুনে ফেলেছিল। এরপরে আমার মা এত বেশি কেঁদেছে যে আমি মুখের ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না (হাদাকাল্লাহ)। ২৮ রমজানের দিকে আমি বোনের বাসায় চলে যাই। ঈদের আগের দিন সুন্দর ভাবে গোসল করে পরে নাস্তা খাওয়ার নাম দিয়ে চলে যাই ঈদের নামাজে। প্রায়ই মসজিদে নামাজ শেষ হয়ে গিয়েছিল। তবুও আমি আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করে হাঁটছিলাম নামাজের জন্য। শেষ পর্যন্ত নামাজ পেয়েছিলাম একটি মসজিদে। সেখানেই নামাজ শিখি পরে নামাজ পড়ে চলে আসে।